Bharat Tirtha | Recitation by Ishita Das Adhikary | ভারততীর্থ – আবৃত্তি ঈশিতা দাস অধিকারী

  হে মোর চিত্ত,পূণ্য তীর্থে

              জাগো রে ধীরে–

       এই ভারতের মহামানবের

              সাগরতীরে।

                    হেথায় দাঁড়ায়ে দু-বাহু বাড়ায়ে

                           নমি নর-দেবতারে,

                    উদার ছন্দে পরমানন্দে

                           বন্দন করি তাঁরে।

         ধ্যান-গম্ভীর এই যে ভূধর,

         নদীজপমালাধৃত প্রান্তর,

         হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র

              ধরিত্রীরে

         এই ভারতের মহামানবের

              সাগরতীরে।

              কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে

                    কত মানুষের ধারা

              দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে

                    সমুদ্রে হল হারা।

                           হেথায় আর্য, হেথা অনার্য

                           হেথায় দ্রাবিড়, চীন–

                           শক-হুন-দল পাঠান মোগল

                                  এক দেহে হল লীন।

                   পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার,

                   সেথা হতে সবে আনে উপহার,

                   দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে

                           যাবে না ফিরে,

                    এই ভারতের মহামানবের

                           সাগরতীরে।

              রণধারা বাহি জয়গান গাহি

                    উন্মাদ কলরবে

              ভেদি মরুপথ গিরিপর্বত

                    যারা এসেছিল সবে,

                           তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে

                                  কেহ নহে নহে দূর,

                           আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে

                                  তারি বিচিত্র সুর।

                    হে রুদ্রবীণা, বাজো, বাজো, বাজো,

                    ঘৃণা করি দূরে আছে যারা আজো,

                    বন্ধ নাশিবে, তারাও আসিবে

                           দাঁড়াবে ঘিরে

                    এই ভারতের মহামানবের

                           সাগরতীরে।

হেথা একদিন বিরামবিহীন

              মহা ওংকারধ্বনি,

       হৃদয়তন্ত্রে একের মন্ত্রে

              উঠেছিল রনরনি।

                    তপস্যাবলে একের অনলে

                           বহুরে আহুতি দিয়া

                    বিভেদ ভুলিল, জাগায়ে তুলিল

                           একটি বিরাট হিয়া।

              সেই সাধনার সে আরাধনার

              যজ্ঞশালায় খোলা আজি দ্বার,

              হেথায় সবারে হবে মিলিবারে

                    আনতশিরে–

             এই ভারতের মহামানবের

                    সাগরতীরে।

       সেই হোমানলে হেরো আজি জ্বলে

              দুখের রক্ত শিখা,

       হবে তা সহিতে মর্মে দহিতে

              আছে সে ভাগ্যে লিখা।

                    এ দুখ বহন করো মোর মন,

                           শোনো রে একের ডাক।

                    যত লাজ ভয় করো করো জয়

                           অপমান দূরে থাক।

              দুঃসহ ব্যথা হয়ে অবসান

              জন্ম লভিবে কী বিশাল প্রাণ।

              পোহায় রজনী, জাগিছে জননী

                    বিপুল নীড়ে,

              এই ভারতের মহামানবের

                    সাগরতীরে।

       এসো হে আর্য, এসো অনার্য,

              হিন্দু মুসলমান।

       এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ,

              এসো এসো খৃস্টান।

                   এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন

                    ধরো হাত সবাকার,

                   এসো হে পতিত করো অপনীত

                    সব অপমানভার।

              মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা

              মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,

              সবারে-পরশে-পবিত্র-করা

                    তীর্থনীরে।

              আজি ভারতের মহামানবের

                    সাগরতীরে।

Kajla Didi | Bangla Kobita Recitation by Ishita Das Adhikary | কাজলা দিদি – যতীন্দ্রমোহন বাগচী

Kajla Didi Ishita Das Adhikary

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই;
মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে-
তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!

ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল!

বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না- তাইতো জেগে রই;
রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?

– যতীন্দ্রমোহন বাগচী